Saturday 03-06-2023

বিশ্বকাপ প্রস্তুতির পথ ধরে সিরিজ জয়ের আশা

Posted By Admin Zafar
  • Updated Friday Mar 17 2023
  • / 176 Read

বিশ্বকাপ প্রস্তুতির পথ ধরে সিরিজ জয়ের আশা

চৈত্রের শুরুতেই সিলেটে বর্ষার আগমনী গান। আগের রাত থেকে ঝড় আর টানা বৃষ্টি ঝরে গেল শুক্রবার সকাল পর্যন্তও। বাংলাদেশের অনুশীলনের আগেই অবশ্য থেমে গেল আকাশের কান্না। তবে চারপাশে হিম হিম শীতের আবহটা রয়েই গেল। বাংলাদেশের অনুশীলনে যদিও শীতলতার রেশ নেই। সবশেষ দুই সিরিজে ভারত-ইংল্যান্ডের তুলনায় এবার চ্যালেঞ্জটা তুলনামূলক সহজ। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের আগেও দলকে দেখা গেল দারুণ চনমনে ও উজ্জীবিত।

 

বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে টি-টোয়েন্টি সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করার সাফল্য এখনও তরতাজা। সেই রেশকে সঙ্গী করে এবার আইরিশদের বিপক্ষে নামছে বাংলাদেশ। সিরিজের শুরু যদিও ওয়ানডে দিয়ে। তিন ম্যাচ সিরিজের সবকটি ম্যাচই সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে। শনিবার প্রথম ম্যাচ শুরু দুপুর ২টায়।

 

শুক্রবার অনুশীলনের শুরুতে অবশ্য বাধে বিপত্তি। গা গরমের ফুটবল খেলায় হাসান মাহমুদের শটে বল লাগে মেহেদী হাসান মিরাজের মুখে। লুটিয়ে পড়েন তিনি তৎক্ষণাৎ। প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। সেখানে সিটি স্ক্যানে কোনো সমস্যা না পেলেও ডান চোখে ধরা পড়ে জমাট রক্ত। সাম্প্রতিক সময়ে দলের বড় ভরসা হয়ে ওঠা অলরাউন্ডারকে পেতে ম্যাচের দিন সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করবে দল।

 

আরও বড় একটা ধাক্কার শঙ্কাও ছিল। ভাইরাল ফিভারে আক্রান্ত তামিম ইকবাল। তবে শুক্রবার অনুশীলনে তিনি অনেকটা সময় ব্যাটিং ও ফিল্ডিং করেন। পুরোপুরি সুস্থ না হলেও বাংলাদেশ অধিনায়ককে পাওয়া নিয়ে বড় দুর্ভাবনা আপাতত নেই।

তিন ম্যাচের এই সিরিজটি আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ সুপার লিগের অংশ নয়। নিজেদের করণীয় তাই আগেই বুঝে নিয়েছে বাংলাদেশের নির্বাচকরা ও টিম ম্যানেজমেন্ট। অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহকে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে। অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানদের মধ্যে আরও একজনকে বিশ্রাম দেওয়ার জোর আলোচনাও হয়েছে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য তা হয়নি। বিশ্বকাপে তাকিয়ে মিডল অর্ডারে ও ফিনিশারের ভূমিকায় বিকল্প প্রস্তুত রাখতে দলে নেওয়া হয়েছে ইয়াসির আলি ও তৌহিদ হৃদয়কে। সিরিজে কোনো পর্যায়ে দুজনকেই খেলতে দেখা যাবে নিশ্চিতভাবে।

টপ অর্ডারের বিকল্প ভাবনায় জাকির হাসানকেও নেওয়া হয়েছিল। তবে চোটে তিনি ছিটকে পড়ায় দলে যুক্ত করা হয় রনি তালুকদারকে। কোনো একটা পর্যায়ে তার সামনেও আসতে পারে খেলার সুযোগ।

তাই বলে পরীক্ষা-নিরীক্ষাকেই সিরিজের মূল লক্ষ্য বলছেন না চান্দিকা হাথুরুসিংহে। নতুনদের বাজিয়ে দেখার পাশাপাশি জয়েও কোনো ছাড় দিতে চান না তারা।

“জয় সবসময়ই আমাদের লক্ষ্য, যে কোনো দলের বিপক্ষেই খেলি না কেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সহজ দল বলে কিছু নেই। বিশ্বকাপে তারা ইংল্যান্ডকে হারিয়েছে, তাই না? নিজেদের দিনে তারা যে কোনো দলকে হারাতে পারে। প্রতিপক্ষ যে দলই হোক না কেন, আমরা খেলোয়াড়ের ভাণ্ডার বাড়ানোর চেষ্টা করতাম। পাশপাশি জয়ের চেষ্টাও সবসময় থাকবেই।”

গত কয়েক বছরে ওয়ানডেতে চমকপ্রদ কিছু পারফরম্যান্স দেখিয়েছে আয়ারল্যান্ড। ২০২০ সালে তারা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে তাদেরই মাঠে হারিয়ে দেয় একটি ওয়ানডেতে। পরের বছর একটি ওয়ানডে জিতে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও। গত বছর তো তারা সিরিজ জিতেই ফিরেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে। জিম্বাবুয়ে, আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয় এসেছে নিয়মিতই।

বাংলাদেশ কোচ সেটা জানেন ভালো করেই। নিজেদের সেরাটা উজাড় করে দিয়েই তাই আইরিশদে হারানোর অপেক্ষায় তিনি।

“খুবই বিপজ্জনক (আয়ারল্যান্ডকে হালকা করে নেওয়া)…। আয়ারল্যান্ড দলকে আমরা ইংল্যান্ডের মতো সম্মান করি। ইংল্যান্ডের সঙ্গে যেরকম প্রস্তুতি নিয়েছিলাম আমরা, সেটির চেয়ে কোনো অংশে কম করে দেখছি না আমরা আয়ার‌ল্যান্ডকে। আমরা ওদেরকে সমীহ করি, তবে কোনো দলকেই আমরা ভয় পাই না।”

“এই একটাই আমাদের মন্ত্র। আমরা সব দলকেই সম্মান করি, কিন্তু কোনো দলকে ভয় করি না। আমরা যদি নিজেদের সেরাটা খেলতে পারি, তাহলে বেশির ভাগ দলের বিপক্ষেই জিততে পারি।”

সিরিজের সম্ভাব্য ফলাফল নিয়ে যতটা কৌতূহল, একইরকম আগ্রহ থাকবে উইকেট নিয়েও। ইংল্যান্ড সিরিজের আগে অধিনায়ক তামিম ইকবাল ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, বিশ্বকাপ প্রস্তুতির জন্য পরের সিরিজ থেকেই ভালো ব্যাটিং উইকেটে খেলতে চায় দল। এবার আয়ারল্যান্ড সিরিজের আগের দিন কোচ হাথুরুসিংহে বললেন, উইকেট দেখে তার দারুণ ব্যাটিং বান্ধব বলেই মনে হচ্ছে।

সত্যিই উইকেট এমন হলে ব্যাটসম্যানদের জন্য অপেক্ষায় পরীক্ষা। এই সময়ের ওয়ানডেতে সহায়ক উইকেটে ৩৫০ রানের বেশি এখন হারহামেশা দেখা গেলেও বাংলাদেশ এখনও ৩৩৫ রানের স্কোরও গড়তে পারেনি। নিজেদের ছাড়িয়ে যাওয়ার পালা এই সিরিজ থেকেই নিতে হবে বাংলাদেশকে।

আয়ারল্যান্ডের জন্যও সিরিজটি হবে নিজেদের ছাড়িয়ে যাওয়ার চ্যালেঞ্জ। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের বিপক্ষে নিষ্পত্তি হওয়া ৯ ম্যাচের ৭টিইতেই তারা হেরেছে। বাংলাদেশের মাঠে ৪ ওয়ানডে খেলে জয়ের দেখা পায়নি এখনও। তবে সেই লড়াইগুলো অনেক আগে। ২০০৮ সালে তিন ম্যাচের সিরিজ খেলেছিল তারা এখানে, আর ২০১১ বিশ্বকাপে খেলেছিল একটি ম্যাচ।

সেসব দলের সঙ্গে এখনকার দলের যে অনেক পার্থক্য, তা গত কয়েক বছরের ফলাফলেই স্পষ্ট। সিরিজটি বাংলাদেশ অবশ্যই শুরু করবে ফেভারিট হিসেবে। সেই সমীহ রেখেই ভালো কিছু করতে চান আইরিশ অধিনায়ক অ্যান্ড্রু বালবার্নি।

“আমাদের জন্য এই সফরটি রোমাঞ্চকর। প্রথমবার বাংলাদেশে ভিন্ন সব সংস্করণের খেলা খেলব। বাংলাদেশ অবশ্যই দেশের মাঠে খুব ভালো ওয়ানডে দল। গত কয়েক বছরে আমরা তা দেখেছি। বিশ্বের সেরা সব দলকে তারা এখানে হারিয়েছে।”

“আমাদের চাওয়া তিন ম্যাচে তিনটি ভালো পারফরম্যান্স মেলে ধরা। আমরা জানি বাংলাদেশ কোথায় শক্তিশালী, এটাও জানি যে কোথায় তাদের আমরা বিপাকে ফেলতে পারি। ভালো একটি দলের বিপক্ষে ভালো খেলতে মুখিয়ে আছি আমরা।”

জয় দিয়ে সিরিজ শুরুর আশা বুকে পুষছেন বালবার্নি। তবে জয়টাই তার কাছে শেষ কথা নয়।

“অবশ্যই প্রথম ম্যাচ জিতে সিরিজে এগিয়ে থাকতে পারলে তা দারুণ। তবে অনেক দিন ধরেই আমরা চেষ্টা করছি নিজেদের খেলার ধরনে উন্নতির। যদি জিততে পারি তো দারুণ, জিততে না পারলে নির্দিষ্ট একটি ধরনে অন্তত খেলতে পারলেও খুশি থাকব আমরা।”

খেলার ধরনের উন্নতি চাওয়া থাকবে তো বাংলাদেশেরও। প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও তাই দুই দল প্রাপ্তি খুঁজবে একই। উইকেট যদি সত্যিই ব্যাটিং সহায়ক হয়, আইরিশরা তাহলে শক্ত চ্যালেঞ্জই জানাতে পারে। ভারত বা ইংল্যান্ড সিরিজের মতো লড়াইয়ের দামামা না থাকলেও তাই উত্তেজনার রসদ কম থাকছে না এই সিরিজেও।

Tags :

Share News


For Add Product Review. You Need To Login First Login Page