আর্জেন্টিনার অধিনায়ক এবং ইন্টার মায়ামির তারকা ফুটবলার লিওনেল মেসি জানিয়েছেন, তিনি এখনো ২০২৬ সালের বিশ্বকাপে খেলার আশা ছাড়েননি। তবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে নিজের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার দিকে তিনি প্রতিদিনই নজর রাখছেন। কাতালান ক্রীড়া দৈনিক ডায়ারিও স্পোর্ট-এর সঙ্গে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে ৩৮ বছর বয়সী এই কিংবদন্তি ফুটবলার খোলামেলা কথা বলেছেন তার ভবিষ্যৎ, বার্সেলোনার প্রতি আবেগ, প্যারিসে সময়, এবং ইন্টার মায়ামিতে নতুন জীবনের গল্প নিয়ে।
বিশ্বকাপ নিয়ে অনিশ্চয়তা, তবে এখনো আশা আছে
মেসি বলেন, “বিশ্বকাপ সবসময়ই বিশেষ কিছু। জাতীয় দলের হয়ে এমন গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্টে খেলা আলাদা অনুভূতির। আগেরবারের মতো আবারও সেই আবেগে ফিরতে পারলে দারুণ লাগবে। তবে আমি দলের ওপর বোঝা হতে চাই না। আমি চাই নিজেকে ফিট রাখার মাধ্যমে দলের কাজে লাগতে, অবদান রাখতে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আমি প্রতিদিন দেখছি আমি কেমন অনুভব করছি। আমি জানি, এটা বিশ্বকাপ—সবচেয়ে বড় প্রতিযোগিতা। আমি অবশ্যই উৎসাহিত, তবে এখন সব কিছু দিন-দিন ধরে দেখছি।”
মেসির এই বক্তব্য স্পষ্ট করে দেয়— তিনি এখনই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন না, কিন্তু মনে মনে এখনো বিশ্বকাপে শেষবারের মতো মাঠে নামার ইচ্ছা পোষণ করছেন।
বার্সেলোনা: ভালোবাসা, আফসোস আর নস্টালজিয়া
সাক্ষাৎকারে বার্সেলোনা প্রসঙ্গে আসতেই মেসির কণ্ঠে ফুটে ওঠে নরম আবেগ। “আমার সারা জীবন কেটেছে বার্সেলোনায়। আমি যেমন কল্পনা করেছিলাম, তেমন বিদায় নিতে পারিনি। চেয়েছিলাম ইউরোপীয় ক্যারিয়ারটা বার্সেলোনাতেই শেষ করতে, তারপর মায়ামিতে আসব। কিন্তু পরিস্থিতি অন্য রকম হয়ে গিয়েছিল,” বলেন তিনি।
বার্সায় কাটানো ২০ বছরের স্মৃতি স্মরণ করে মেসি বলেন, “আমি ১২ বছর বয়সে বার্সেলোনায় গিয়েছিলাম। ওখানকার মানুষের ভালোবাসা কখনো ভুলতে পারব না। আমি ও আমার পরিবার এখনো বার্সেলোনাকে ভীষণ মিস করি। আমাদের বাড়িটা এখনো সেখানেই, আর একদিন আমরা অবশ্যই ফিরব।”
তিনি আরও বলেন, “আমি অপেক্ষা করছি নতুন ক্যাম্প ন্যু স্টেডিয়ামটা দেখতে যাওয়ার জন্য। ওখানে ফিরে গেলে অনেক স্মৃতি মনে পড়বে, হয়তো চোখে জলও আসবে।”
পিএসজি-তে সময়: হতাশা, কিন্তু ঘৃণা নয়
প্যারিসে কাটানো সময় নিয়ে মেসি বলেন, “অনেকে ভাবে প্যারিসে সময়টা ভয়ংকর ছিল, কিন্তু বিষয়টা এমন না। আমি ফুটবল দিক থেকে সুখে ছিলাম না, নিজের খেলা উপভোগ করতে পারছিলাম না। কিন্তু পরিবারের দিক থেকে সেটা ছিল দারুণ অভিজ্ঞতা। শহরটা অসাধারণ, মানুষগুলো দারুণ ছিল।”
এই মন্তব্যের মাধ্যমে মেসি পরিষ্কার করে দেন, পিএসজি অধ্যায় তার জীবনে হয়তো স্বস্তিদায়ক ছিল না, কিন্তু সেটি কখনোই “নরকযাত্রা” ছিল না।
ইন্টার মায়ামি: নতুন অধ্যায়, নতুন চ্যালেঞ্জ
ইন্টার মায়ামিতে খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে মেসি বলেন, “আমি কখনো হার মানতে ভালোবাসি না। মাঠে নামলে জয়ের জন্যই নামি। আমরা এখানে এসেছিলাম ক্লাবটাকে প্রতিযোগিতামূলক একটা দলে রূপ দিতে—যেটা ট্রফি জিততে পারে, লড়াই করতে পারে। আমি মনে করি, আমরা সেটা করতে পেরেছি।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আমি যতদিন ফিট আছি, ততদিন খেলব। কিন্তু যেদিন মনে হবে আর পারছি না, মাঠে সংগ্রাম করতে হচ্ছে, আর খেলা উপভোগ করতে পারছি না—সেদিনই বিদায় বলব। এখন আমি ভালো আছি, খেলা উপভোগ করছি, এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”
শেষ কথা: আনন্দে ভরা শেষ অধ্যায়
বিশ্বজুড়ে কোটি ভক্তের মতো মেসিও জানেন, ফুটবলে তার সময় ধীরে ধীরে ফুরিয়ে আসছে। কিন্তু তার মুখে এখনো আত্মতৃপ্তির হাসি—একজন কিংবদন্তি যিনি সব জিতেছেন, কিন্তু এখনো মাঠে নামেন জয়ের ক্ষুধা নিয়ে।
“যতদিন শরীর সাড়া দেবে, ততদিন খেলব,” বলেন তিনি।
“আর যেদিন মনে হবে আনন্দটা হারিয়ে ফেলেছি, সেদিনই বলব—এই পর্যন্তই।”