অতিরিক্ত খেলার চাপে দিশেহারা

চায়না ওপেনের অঘটনময় এক দিন। পাঁচটি ম্যাচই খেলোয়াড়দের চোটের কারণে অসমাপ্ত থেকে যায়। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ব র‍্যাংকিংয়ে ২ নং ইগা স্বিয়াটেক পর্যন্ত বলতে বাধ্য হয়েছেন— ডব্লিউটিএ-এর দীর্ঘ ক্যালেন্ডার এবং বাধ্যতামূলক টুর্নামেন্ট নিয়ম খেলোয়াড়দের পাগল করে দিচ্ছে।

দিনের শুরুতেই ক্যামিলা ওসোরিও ম্যাচের মাঝখানেই ম্যাচ ছেড়ে দেন। এরপর একে একে ম্যাচ ছেড়ে দেন লুইস বোয়সন, জেং চিংওয়েন, লরেঞ্জো মুসেতি ও জাকুব মেনসিক।

এসব নিয়েই স্বিয়াটেকের এমন মন্তব্য। রয়টার্সকে দেওয়া বক্তব্যে ছয়বারের গ্র্যান্ড স্ল্যাম চ্যাম্পিয়ন বলেন,

“ডব্লিউটিএ-এর এই বাধ্যতামূলক নিয়মগুলো আমাদের জন্য অসহনীয় হয়ে উঠেছে। সম্ভবত আমাকে কিছু টুর্নামেন্ট ছেড়ে দিতে হবে, যদিও সেগুলো বাধ্যতামূলক।”

স্বিয়াটেক যোগ করেন, মৌসুমটা খুবই লম্বা এবং তীব্র—খেলোয়াড়রা এখন ক্লান্ত। তিনি বলেন, অনেকেরই মনে হয় সবাই অতিরিক্ত ক্লান্ত, এবং এশিয়ার পর্ব আসলে সবচেয়ে কঠিন — কারণ এটা ক্যালেন্ডারের একেবারে শেষে, তখন খেলোয়াড়দের আরো চাপ নেওয়া কঠিন হয়ে যায়।

ডব্লিউটিএ-এর যে বিধি নিয়ে তিনি কথা বলছেন, তাতে শীর্ষ খেলোয়াড়দের বাধ্য করা হচ্ছে চারটি গ্র্যান্ড স্ল্যামে, ১০টি ডব্লিউটিএ-১০০০ টুর্নামেন্টে এবং ৬টি ডব্লিউটিএ-৫০০ ইভেন্টে অংশগ্রহণ করতে। এসব মিস করলে র‍্যাংকিং পয়েন্ট কাটা, জরিমানা ইত্যাদি শাস্তিও হতে পারে।

“আমি মনে করি কোনও শীর্ষ স্তরের খেলোয়াড়ই বাস্তবে এটা অর্জন করতে পারবে না… সময়সূচিতে সবটা ঢুকানো অসম্ভব,”

স্বিয়াটেক বলেন; তিনি নিজে এ বছরের সব বাধ্যতামূলক ইভেন্টে খেলেছেন।

“আমাদের বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে কাজ করতে হবে—নিয়মগুলো নিয়ে শুধু কষ্ট পাওয়ার বদলে ভাবতে হবে কোনটা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এটা কঠিন।”

ডব্লিউটিএ বলছে, খেলোয়াড়দের কল্যাণই তাদের মূল অগ্রাধিকার। তারা বলছেন, খেলোয়াড়দের বক্তব্য তারা খেলোয়াড় কাউন্সিল ও বোর্ডের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে গ্রহণ করছে এবং পরবর্তী সময়ে সার্কিটের কাঠামো উন্নত করা ও ম্যাচ ফি বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

ডব্লিউটিএ আরও বলেছে, গত দশকের তুলনায় এখনকার পরিকল্পনায় খুব বেশি ইভেন্ট যুক্ত করা হয়নি। আর নতুন কাঠামো শীর্ষ-৩০ খেলোয়াড়দের জন্য কোন ইভেন্টে খেলবে সে বিষয়ে আগেই সিদ্ধান্ত নিতে পারে। বিশেষ করে তরুণ খেলোয়াড়দের বেশি টুর্নামেন্ট খেলার সুযোগ করে দিচ্ছে। পাশাপাশি আগামী ১০ বছরে ৪০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি পারিশ্রমিক বাড়ানোর প্রতিশ্রুতিও নিশ্চিত করবে। ডব্লিউটিএ জানিয়েছে তারা খেলোয়াড়দের মতামতের ওপর ভিত্তি করে ট্যুর কাঠামো পর্যালোচনা চালিয়ে যাবে, যদিও ক্যালেন্ডার পরিবর্তন করতে এটিপি, আইটিএফ এবং গ্র্যান্ড স্ল্যাম কর্তৃপক্ষদের সঙ্গে সমন্বয় প্রয়োজন।

এদিকে প্রফেশনাল টেনিস খেলোয়াড় সমিতি পিটিপিএ মার্চ মাসে কোর্টে মামলা দায়ের করে, সেখানে তারা বর্তমান পরিস্থিতি “টেকসই নয়”। ডব্লিউটিএ এ অভিযোগকে পুরোপুরি ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে।

বড় মঞ্চে খেলার চাপ, দীর্ঘ সিজন আর বাধ্যতামূলক ইভেন্টের নিয়মকে কেন্দ্র করে ডব্লিউটিএ ও খেলোয়াড়দের মধ্যে টানাপোড়েন এখন আরও স্পষ্ট। স্বাস্থ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ক্যারিয়ারের দিক বিবেচনায় খেলোয়াড়রা এখনই কৌশলী সিদ্ধান্ত নিতে চাইছেন। আর কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, তারা খেলোয়াড়ের ভাল’র জন্যই এ নিয়ম করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *