কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। মাত্র ১২৯ রানে পাকিস্তানকে গুটিয়ে দিয়ে ছয় উইকেটের বড় জয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ওয়ানডে বিশ্বকাপে জয় পেল টাইগ্রেসরা। মজার ব্যাপার, আগেরবারও তাদের শিকার ছিল একই প্রতিপক্ষ—পাকিস্তান।
শুরুতেই মারুফার ঝলক
বাংলাদেশের বোলিংই আজ মূল পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। বল হাতে নেমেই মারুফা আখতার আগুন ঝরালেন। ইনিংসের প্রথম ওভারেই তুলে নিলেন দুই উইকেট। পাকিস্তানি ব্যাটাররা তখনো সেট হতে পারেনি, আর বাংলাদেশের একমাত্র পেসার তাদের কাঁপিয়ে দিলেন শুরুতেই।
স্পিনের ঘূর্ণিতে পাকিস্তান ছন্নছাড়া
পরে তো পুরো শো ছিল স্পিনারদের। ফাহিমা খাতুন, রাবেয়া খান আর সোহানা আখতার—তিন লেগস্পিনার মিলে পাকিস্তানের মেরুদণ্ড ভেঙে দিলেন। সোহানা আখতার ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে নিলেন ৩ উইকেট মাত্র ৫ রানে। নাহিদা আখতারও ছিলেন সাফল্যের অংশীদার, তার বোলিংয়ে পাকিস্তানের মাঝের সারি ভেঙে যায়।
ফলাফল—পাকিস্তান গুটিয়ে যায় মাত্র ১২৯ রানে। বিশ্বকাপ ইতিহাসে তাদের খারাপ রেকর্ড আরও লম্বা হলো। গত ২২ বিশ্বকাপ ম্যাচে এটা তাদের ২১তম হার!

ব্যাট হাতে নতুন তারকা ঝিলিক
তবে ম্যাচ শেষ করতে দরকার ছিল শান্ত ব্যাটিং। সেখানেই নায়ক হয়ে উঠলেন ডেবিউ করা ওপেনার রুবিয়া হায়দার ঝিলিক। দারুণ ধৈর্য আর মেধার প্রমাণ দিয়ে তিনি অপরাজিত থাকলেন ৫৪ রানে। বাংলাদেশের ইনিংসে এটাই ছিল ভিত্তি, যার ওপর দাঁড়িয়ে জয়টা সহজ হয়ে যায়। এখন পর্যন্ত ৩ বাংলাদেশি ব্যাটার নিজের প্রথম ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি করলেন, এদের মধ্যে সবার ওপরে এখন ঝিলিক।
ক্যাপ্টেন নিগার সুলতানা ব্যাট হাতে কিছুটা সময় নিয়েছিলেন, তবে দ্রুত খাপ খাইয়ে নিয়ে খেলেছেন কার্যকরী ইনিংস। পাকিস্তানি বোলাররা বারবার রুবিয়াকে চেপে ধরতে চাইলেও তিনি ঠাণ্ডা মাথায় একের পর এক সুন্দর শট খেলেছেন।
পাকিস্তানের হতাশা, বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাস
পাকিস্তান শুরুতে কিছুটা প্রতিরোধ গড়লেও ব্যাটাররা বড় জুটি গড়তে ব্যর্থ। তাদের হয়ে ফাতিমা সানা আর রামিন শামিম কিছুটা লড়াই করলেও দলকে টানার মতো কেউ ছিলেন না।
অন্যদিকে বাংলাদেশ দেখিয়েছে—তারা শুধু বোলিং নয়, ব্যাটিংয়েও ক্রমশ পরিণত হচ্ছে। বিশেষ করে রুবিয়ার ইনিংস দলের ভবিষ্যতের জন্য বাড়তি আশার আলো জ্বালাল।
শেষ কথা
বাংলাদেশ নারী দলের জন্য পাকিস্তান যেন শুভ প্রতিপক্ষ। প্রথম বিশ্বকাপ জয় এসেছিল তাদের বিপক্ষে, দ্বিতীয়টাও তাই।
এ জয় শুধু গ্রুপ পর্বে গুরুত্বপূর্ণ দুই পয়েন্টই এনে দেয়নি, দিয়েছে আত্মবিশ্বাসও। সামনের ম্যাচগুলোতে টাইগ্রেসদের ভরসা থাকবে তাদের দুর্দান্ত স্পিন আক্রমণ আর ঝিলিকের মতো উদীয়মান নতুন তারকারা।
